ভাবসম্প্রসারন আলো বলে অন্ধকার তুই বড় কালো, অন্ধকার বলে ভাই তুই আলো
আলো বলে অন্ধকার তুই
বড় কালো।
অন্ধকার বলে, ভাই তাই
তুই আলো।
মূলভাব: অন্ধকার
আছে বলেই আলো এত তমূল্যবান। দুঃখ আছে বলেই সুখ এত মহীয়ান।
সম্প্রসারিত
ভাব: বৈচিত্র সৌন্দর্যের প্রসূতি। বিধাতার সৃষ্টিতে বৈচিত্র্য আছে বলেই প্রকৃতির সৌন্দর্য
মানুষের অবূভূতিকে নাড়া দেয়। মানুষ বিস্ময়পুলকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলে ওঠে, ‘বা কি সুন্দর!
সরোবরের নিস্তরঙ্গ কালো জলের পটভূমিতে অপরূপ সৌন্দর্যের পশরা সাজিয়ে যখন কমল বিকশিত
হয়ে ওঠে, আমরা তখন মুগ্ধ হই। কিন্তু পঙ্কজের এ সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তোলার জন্য বিশ্বশিল্পী
তার মৃণালে কন্টক সৃষ্টি করেছে। কণ্টক আছে বলেই সম্ভবত কমল এত সুন্দর ও মনোহারী। সুন্দরী নারীর কপালে কালো তিল তার স্বাভাবিক সৌন্দর্যকে
শতগুণ বর্ধিত করে, তাকে পূপের রাণীতে পরিণত করে।
আমাদের জীবনে
বিরহ আছে বলেই মিলন এতো মধুর; দুঃখ আছেই বলেই সুখ
আমাদের বেশি কাম্য; অন্ধকার আছে বলেই আলো এতো আকাঙ্ক্ষিত। দুনিয়াতে যদি অভাব
না থাকত তবে জগতের তিনত্য আবিষ্কার সম্ভব হতো না। স্তব্ধ হয়ে পরত প্রগতির দুর্বার গতি।
জগতের বিচিত্রদর্শী জিনিসের মধ্যে তুলনা করার সুযোগ আছে বলেই আমাদের মানসিকজগতে বিপ্লাবত্মক
পরিবর্তন সূচিত হয়, সুখ-দুঃখ, আশা-আনন্দের অবূভূতি ত আমরা অবিরাম আন্দোলিত হই। জীবন
ও জগতের এ বৈচিত্র্যই মানুষের চোখে মায়ার অঞ্জন পরিয়ে দেয়। অন্ধকার আছে বলেই আলো মায়াময়।
অন্ধকার না থাকলে আলো কোনো মূল্য থাকত না । আমাদের দৈনন্দিন জীবনে দুঃখকষ্ট, হতাশা,
অন্ধকার, ব্যথা-বিরহ, অভাব এগুলো আছে বলেই আমরা জীবনকে উপভোগ করতে পারছি এবং ভালোবাসা,
সুখ,মিলন এগুলোর মাঝে নিজেকে বিলীন করতে পারছি। এখানেই জীবনের সার্থকতা এবং পরিপূর্ণতা।
বিকল্প হিসেবে আরেকটি দেওয়া হলো
আলো বলে অন্ধকার তুই বড় কালো।
অন্ধকার বলে, ভাই তাই তুই আলো।
ভাব-সম্প্রসারণ: সৃষ্টিকর্তা আলো ও অন্ধকার সৃষ্টি করেছেন। প্রথিবীতে অন্ধকারের অভাবে আলোর গৌরব ম্লান হয়ে যায়।আলো এবং অন্ধকার পরস্পর বিপরীতধর্মী হলেও একে অপরের পরিপূরক। মানবজীবনের সর্বত্রেই আলো-আঁধাররূপ সুখ-দুঃখের সমাবেশ দেখতে পাওয়া যায়। একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটির অস্তিত্ব কল্পনামাত্র। জীবনে আলো-আধার, সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা পাশাপাশি আছে বলেই জীবনের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য সহজে অনুধাবন করা যায়।
আঁলো ও আঁধার প্রথিবীর সৃষ্টি থেকেই বিদ্যমান। আলো কও আঁধার দুটিই বাস্তবতা । আঁধারের পটভূমিতেই উদ্ভাসিত হয় আলো মহিমা। যদি পৃথিবীতে কখনো সূর্য আস্ত না যেত। অহোরাত্র সূর্যালোক চারদিকে প্লাবিত হত, তাহলে তার কি কোনো মূল্য থাকত? অন্ধকার এসে দিবালোককে গ্রাস করে বলেই দিনের আলো বৈচিত্র্যহীন ও বৈশিষ্ট্যহীন হয়ে পড়ে না। আঁলো-আধারের এই আগমন-নির্গমন আছে বলেই পৃথিবী বৈচিত্র্যময় ও সুন্দর হয়ে উঠেছ। আমাদের এই সুন্দর পৃথিবীতে পরস্পর বিপরীতধর্মী উপাদানসমূহের দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়া সচল অস্তিত্ববান। সৃষ্টি-ধ্বংস, জন্ম-মৃত্যু, আলো-আঁধার, সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, তৃপ্তি-অতৃপ্তি, ভালো-মন্দ, ইতর-ভদ্র, সুজন-কুজন, পাহাড়-সমতল, মরভূমি-সমুদ্র এসব্ প্রাকৃতিক বৈপরীত্যের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে এ জগৎ-সংসার। এরূপ বৈপরীত্যের মধ্যেই সৃষ্টির সৌন্দর্য নিহিত রয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন সবকিছুর অস্তিত্বই মূল্যহীন। ধ্বংসের ভয় আছে বলেই মানুষ সৃষ্টিকে সংরক্ষিত করে, ভালোবাসে। পৃথিবীতে সুখের অস্তিত্ব আছে বলেই মানুষ দুঃখকে হাসিমুখে বরণ করে সুখের আশায়। আর দুঃখের অস্তিত্ব আছে বলেই সুখের বৃন্তে বসবাস করার জন্যে মানুষের প্রাণান্ত প্রচেষ্টা
আলোর রূপ ফুটিয়ে তোলার জন্যে যেসব অন্ধকার একান্ত প্রয়োজন, তেমনি দুঃখবেদনা ও অভাবের তীব্র জ্বালা আছে বলেই আমাদের জীবনে সুখ, আনন্দ ও স্বচ্ছন্দ্য এত কাম্য। তাই বলা হয়, ‘দুঃখের মত এত বড় পরশপাথর আর নেই’। দুঃখ সয়েই আমরা স ুখের আনন্দ ও মহিমাকে উপলব্ধি করি। বস্তুত আলো আঁধারের যুগল অস্তিত্ব প্রকিৃতি ও জীবনের বৈশিষ্ট্যকেই তুলে ধরে। জীবনের এই বাস্তবতার মধ্যেই আমাদের পথ চলতে হবে।
Post a Comment
Pllease wait a moment