জাতি
গঠনে নারী সমাজের ভূমিকা
উপস্থাপনা:
দেশ ও জাতিগঠনমূলক সর্ববিধ কাজে পরুষের পাশাপাশি নারীরাও গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন-
কোন কালে
একা হয়নিক জয়ী পুরূষের তরবারী
প্রেরণা দিয়েছে,
শক্তি দিয়েছে বিজয়ী লক্ষী নারী।
দেশের তথা
বিশ্বের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী। সুতরাং এ নারীসমাজকে দেশ গঠনের উল্লেখযোগ্য হাতিয়ার হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
শিক্ষা-দীক্ষায় তাদেরকে যথার্থই যোগ্য নাগরিক হিসেবে তৈরি করতে হবে। তবেই জাতি গঠনে
তারা স্মরণীয় ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
নারীত্বের
গৌরব: নারীরা সার্থকতা মাতৃত্বে। এ কারনে ইসলাম ‘মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত’ বলে
নারীর মাতৃত্বকে সর্বোচ্চ গৌরবে ভূষিত করেছ। জাতির জন্য, দেশের জন্য নারীর সবচেয়ে অবদান,
সবচেয়ে বড় উপহার তার সন্তান। পৃথিবীর সকল সমাজসংস্কারক, চিন্তাবিদ, বিজ্ঞানী, কবি,
লেখক, রাষ্ট্রনায়ককে তারাই প্রতিপালন করেছেন। কেবল প্রতিপালন নয়, সন্তানের জীবনগঠন
এবং জীবনের দিকনির্দেশনায়ও তারা অমূল্য অবদান রেখেছেন। হযরত মুহাম্মদ (স)- এর মতো মহান
ব্যক্তিত্ব, নিউটনের মতো বৈজ্ঞানিক, প্লেটো, সক্রেটিস, এরিস্টটলের মতো রাষ্ট্রবিজ্ঞানি,
বিশ্ববিজয়ী বীর নেপোলিয়ন- সবাইকে গর্ভে ধারণ করে মাতৃত্বের গৈারব অর্জন করেছে নারীই।
আগামীদিনেও বৈজ্ঞানিক, রাষ্ট্রনায়ক, লেখক, সাহিত্যিক, কবি, সমাজসংস্কারক, চিন্তানায়ক
প্রভৃতি দেশ গড়ার মানুষদের মানুষ করার দয়িত্ব পালন করবে নারীই। এ দয়িত্ব, এ কাজ মহাগুরুত্বপূর্ণ।
এ কারনেই মায়ের ঋণ সন্তান কোনদিনও শোধ করতে পারে না। অনুরূপভাবে দেশ ও জাতির পক্ষেও
নারীর ঋণ শোধ করা সম্ভব নয়।
নারীর কর্তব্য:
জাতীয় জীবনের উন্নয়ন ও দেশগঠনে পুরুষের পাশাপাশি নারীসমাজের ভূমিকাও বিশেষভাবে পরিলক্ষিত
হয়। বর্তমানে বিশ্ব ৬৫০ কোটি লোকের অর্ধেক নারী। সুতরাং সমাজ ও সভ্যতার উন্নয়নের জন্য
নারীর ভূমিকা একান্ত প্রয়োজন। সন্তান প্রতিপালন, সন্তানের জীবনগঠন নারীর প্রথম এবং
প্রধান কর্তব্য হলেও জীবনের আরো অনেক ক্ষেত্রে নারীর করণীয় অনেক কিছুই রয়েছে। অতিতের
মতো আজ নারীসমাজ পিছিয়ে নেই। আজ যুগের বিবর্তনে জীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্র প্রসারিত হয়েছে।
সেই সাথে পরিবর্তিত হয়েছে মানুষের জীবনের গতি, বেড়েছে কাজ। আর এ পরিবর্তিত অবস্থার প্রেক্ষিতে নারীর দায়িত্ব
বেড়েছে।
# জাতি গঠনে
নারীসমাজ
সন্তানের
চরিত্র গঠনে: মায়ের কাছ থেকে সন্তান যে শিক্ষা লাভ করে তাই পরবর্তী জীবনে তার চরিত্র
এবং জাতি গঠনে ভূমিকা রাখতে সহায়তা করে। একজন মা শিক্ষিতা হওয়া মানে একটি পরিবার শিক্ষিত
হওয়া। একটি পরিবার শিক্ষিত হওয়া মানে একটি সমাজ শিক্ষিত হওয়া। একটি সমাজ শিক্ষিত হওয়া
মানে একটি দেশ উন্নত হওয়া। সুতরাং সন্তানের চরিত্র গঠনের মাধ্যমে নারীসমাজ জাতি গঠনে
সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখতে পারে।
পারিবারিক
জীবন: নারী পারিবারিক জীবনের সুখ-শান্তি, পুরুষের জীবন সুন্দর ও সার্থক করে তোলে। এতে
পুরুষের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পায় এবং জাতীয় জীবনের উন্নতির পথও প্রশস্ত হয়। পারিবারিক
জীবনের সখ-শান্তি রক্ষা করার দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে আমাদের নারীসমাজ দেশ ও জাতি গঠনে
অনন্য ভূমিকা পালন করতে পারে। আল্লামা ইকবালের ভাষায়-
পৃথিবীর তসবীর
রঙ্গীন করেছে নারী,
জীবন চিওের
উষ্ণতা তারই সেতারের ধ্বনি।
শিক্ষাক্ষেত্রে:
শিক্ষাক্ষেত্রে নারীসমাজের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে
তারা পুরুষের চেয়ে অধিক দক্ষতা ও যত্নসহকারে শিশুদের মন-মানসের বিকাশ ঘটিয়ে ভবিষ্যতে
জাতির পরিচালক হিসেবে গড়ে তুলতে গুরুত্বপর্ণ ভূমিকা পালন করে।
রাজনীতিতে
নারীর ভূীমকা: রাজনীতিতে মহিলারা সক্রিয় ভূমিকা পালনের মাধ্যমে দেশ ও জাতি গঠনে অবদান
রাখছে।
সিভিল সার্ভিসে
নারীর ভূমিকা: এক পরিসংখ্যান মতে, আগে ৪% গেজেটেড
ও ৬.১% ননগেজেটেড অফিসার মহিলা ছিল। বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৭.৫ এবং ৮.৪।
১৯৯২-তে সরকারি অফিসে সর্বমোট মহিলা চাকরিজীবীর সংখ্যা ছিল ৭৮০৩৭ জন। বর্তমানে এই সংখ্যা
অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে, যারা দেশ সেবার মাধ্যমে জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
উৎপাদন বৃদ্ধিতে:
বর্তমান বিশ্বে ৫০%-এর অধিক মহিলা দক্ষ শ্রমিক রয়েছে। যারা বিভিন্ন উৎপাদন ক্ষেত্রে
নিয়োজিত থেকে দেশের সামগ্রিক উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে। এজন্য বিশ্বব্যাংক মন্তব্য
করেছে, শিল্প ও ব্যবসার জয়েও নারীদের জন্য বিনিযোগ বেশে লাভজনক।
অর্থানৈতিক
উন্নয়নে নারীর ভূমিকা: বিশ্বব্যাংক পরামর্শ দিয়েছে, অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নারীদের অংশগহণ
নিশ্চিত করতে পারলেই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। ওখঙ-এর এক হিসাব মতে, বিশ্বে ৯৯৭ মিলিয়ন মহিলা অর্থনৈতিক
কর্মকান্ডে নিয়োজিত থেকে অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
কৃষিক্ষেত্রে:
কৃষিক্ষেত্রে নারীদের অবদান অপরীসিম। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
পালন করে। বিশ্বব্যাংকের এক সাম্প্রতিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, যদি আমরা কৃষিক্ষেত্রে
নারীদের বৃদ্ধি করতে পারি, তাহলে কৃষি উৎপাদন ২৪% বৃদ্ধি পাবে।
সন্তানদের
ভবিষ্যৎ ভাগ্য বিনির্মাণে: সন্তানদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করতে তার মায়ের ভূমিকাই অগ্রগন্য।
মা-ই সন্তানের প্রাথমিক শিক্ষক। তাই মায়ের ভূমিকা লক্ষ্য করে নেপোলিয়ন বলেছেন- The
future destiny of the child always the work of the mother.
পদক্ষেপ গ্রহণ:
জাতি গঠনে নারী সমাজের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালনে নিন্মোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেথে
পারে।
ক. নারীশিক্ষার
হার বাড়াতে হবে।
খ. অনগ্রসরতা
ও কুসংস্কার দূর করতে হবে।
গ. যথাযথ
প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে।
ঘ. কর্মমুখী
ও বৃত্তিমূলকক শিক্ষায শিক্ষিত করতে হবে।
ঙ. মাতৃত্বের
প্রতি সম্মান দেখাতে হবে।
চ. অধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
ছ. সকল উন্নয়ন
কর্মকান্ড তাদের অংশগ্রহন নিশ্চিত করতে হবে।
উপসংহার: উপরিউক্ত
পদক্ষেপসমূহ বাস্তবায়নে কর হলে আশা করা যায়, অদুর ভবিষ্যতে আমাদের দেশের নারীসমােজ
জাতি গঠনে অবিস্মরনীয় ভূমিকা রাখতে হবে।
Post a Comment
Pllease wait a moment