দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ভ্রমটাকে রুখি ভাবসম্প্রসারণ

 দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ভ্রমটাকে রুখি ভাবসম্প্রসারণ
দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ভ্রমটাকে রুখি ভাবসম্প্রসারণ

দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ভ্রমটাকে রুখি,

                                               সত্য বলে, আমি তবে কোথা দিয়ে ঢুকি?

মূলভাব: সত্যকে পেতে হলে ও ভ্রান্তির সকল বাধা অতিক্রম করতে হবে। তাহলে সত্য প্রতিষ্ঠিত হবে।

সম্প্রসারিত ভাব: সত্যই জীবনের সৌন্দর্য, সত্যই পরম আরাধ্য। সত্যের সিড়িঁ বেয়েই  জীবনের বিকাশ সাধিত হয়। অপরদিকে অসত্য জীবনে ধ্বংস ডেকে আনে। সত্য-সন্ধানী মানুষ জীবনের  প্রতিটি পদক্ষেপে সুন্দর ও কল্যাণের সাধনা করেন। অসত্যের অকল্যাণ থেকে মুক্ত থাকার প্রচেষ্টা থাকা সত্ত্বেও আমাদের একে অস্বীকার করলে চলে না। প্রকৃতপক্ষে সত্য কোনো বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়। আলোর উদ্দীপক যেমন অন্ধকার তেমনি অসত্যই সত্যের সৌন্দর্যকে মহিমান্বিত করে তোলে। বসউত সত্য ও মিথ্যা মিলেই জীবনের বাস্তবতা। সত্য কাঙ্কিত হলেও তা মিথ্যার সাথে মিশেল হয়ে আমাদের উপস্থিত হয়। আমাদের প্রজ্ঞা ও  অভিজ্ঞতা দিয়ে মিথ্যার ভিড় থেকে সত্যকে গ্রহণ করতে হয়। কখনো কখনো সত্য-মিথ্যা আমাদের বিভ্রান্তিতে ফেলে দেয়। তা সত্ত্বেও আমাদের সত্যকেই খুঁজে বের করতে হয়। মিথ্যার ভয়ে যদি  আমরা দ্বার রুদ্ধ করে গৃহবন্দি হয়ে থাকি তাহলে সেটা যৌক্তিক ও বাস্তবানুগ হবে না। তাহলে মিথ্যাকে পরিহার করতে গিয়ে আমরা সত্যকেও হারিয়ে ফেলতে পারি। কেননা সত্যও মেথ্যার অবস্থান অবিচ্ছিন্ন। তাই আমাদের দ্বার উন্মূক্ত করেই সত্য ও ‍মিথ্যাকে প্রবেশাধিকার দিতে হবে। বিবেক, বুদ্ধি ও শিক্ষার কিষ্টিপাথরে যাচাই করে মিথ্যাকে উপেক্ষা করে সত্যের রজ্জু আঁকড়ে ধতে হবে। সত্য সূর্যের মতো ধ্রুব। আর সূর্যের আলো পেতে হলে আমাদের দ্বার উন্মোচিত করতে হবে। অন্ধকারের প্রাচীর ডিঙিয়ে পৌছাতে হবে সোনালী ঊষার দিগন্তে । বিশ্বব্যাপী যে প্রাণের মেলা বসেছে তাতে কোনো কিছুই নির্ভেজাল সত্য কিংবা নয়। তাই সত্য-মিথ্যার সমন্বিত উপস্থিতিই জীবনবাস্তবতা।

বিকল্প হিসেবে আরো একটি দেওয়া হলো

দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ভ্রমটাকে রুখি,

                                               সত্য বলে, আমি তবে কোথা দিয়ে ঢুকি?

ভাব-সম্প্রসারণ: মানুষের জীবনে সত্য-মিথ্যা, ভাল-মন্দ একত্রে জড়িয়ে আছে। একটিকে ছাড়া অপরিটেকে যথাযথ উপলব্ধি করা যায় না বলে উভয়েই উভয়ের পরিপূরক। তাই জীবনের  প্রয়োজনে সত্য-মিথ্যা চিরন্তন। প্রথিবীতে যারা মিথ্যা ও ভুল-ভ্রান্তিকে বাদ দিয়ে কেবল সত্য লাভের পথ খোঁজে তারা কখনোই সত্যের নাগাল পায় না। বস্তুত জীবনের অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়েই সত্য এবং মিথ্যাকে, ভ্রান্তি এ বং অভ্রান্তিকে চিনে নিতে হবে।

সত্যই জীবন, সত্যই আলো- প্রথিবীতে মানুষ চায় মিথ্যার কুহকে পথভ্রান্ত না হতে, তার একান্ত কাম্য ও লক্ষ্য ‘সত্য’। কিন্তু সত্যকে সহজে পাওয়ার কও চেনার কোনো পথ নেই। কেননা সত্য এমন কোন বিশুদ্ধ ধারণা নয় যে তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে জীবনের সকল গতিবিধিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সত্য হলো একটি আপেক্ষিক ধারণা। জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই সত্য-মিথ্যাকে চিনে নেওয়া যায়। দিনকে যেমন রাতের সঙ্গে তুলনা করেই চেনা যায়, তাপকে যেমন শৈত্যের সঙ্গে তুলনা করে অনুভব করা যায়, সত্যকেও তেমনি মিথ্যার পাশাপাশি রেখেই উপলব্ধি করতে হয়। ভুল বা মিথ্যা মানবজীবনের অনিবার্য একটি ঘটনা। তাকে স্বীকার করেই তাকে অতিক্রম করতে হঃয়, এড়িয়ে গিয়ে নয়। মানবজীবনের একেকটি ভুল মানুষকে এক বা একাধিক সত্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। পার্থিব জগতে সত্য ও মিথ্যার রয়েছে পাশাপাশি অবস্থান। সত্য-মিথ্যার পরস্পর এমন অবিচ্ছেদ্য যে, নিরবছিন্ন সত্য এবং মিথ্যাকে পৃথক জৃথকভাবে উদঘাটন করা সম্ভবপর নয়। জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতায় দুর্গম পথে চলতে চলতে এ-সব ভুলভ্রান্তি ও মিথ্যাকে অপসারিত করেই মানুষকে সত্যের মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়। অজস্র ভুলভ্রান্তিকে অতিক্রম করলেই যথার্থ সত্যের সন্ধান মেলে। যেমন অন্ধকারের মধ্যেই আলো উজ্জ্বলতা ঘরা পড়ে, তেমনি ভ্রান্তির মোহাবরণকে  ছিন্ন করেই সত্যের জ্যোতির্ময় রূপ ধরা পড়ে। শিশু যেমন আছাড় খেতে খেতে হাঁটতে  শেখে, মানুষও তেমনি ভুলভ্রান্তির মধ্য দিয়ে সত্যকে চিনে নেয়। জীবনের সকল দ্বার রুদ্ধ করে দিলে হয়ত  ভ্রান্তিকে ঠেকানো যায়, কিন্তু সত্য েকপাওয়া যায় না । আকরিক ধাতু যেমন মাটির সঙ্গে মিশে থাকে, মাটি পারষ্কার করে তাকে পেতে হঃয়, জীবনের  পথেও মেমনি সত্য আর মিথ্যা মিশে আছে । জঅবন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়েই সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতে হয়্।  এ- জন্য কাঙি্ক্ষত হিরন্ময় সত্য উঘাটনে বাস্তওবর কঠিন ও দুর্গম পথে প্রয়োজনে নিঃশঙ্জ দীপ্ত পদচারণা।

ছোটখাটে ভুলভ্রান্তি সত্যকে পাওয়ার পথে প্রতিবন্ধক বা অন্তরায় নয়, বরং ভুলভ্রান্তি থেকে বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভ করেই মানুষ প্রকৃত সত্যকে উদ্ঘাটন করে।

Post a Comment

Pllease wait a moment

Previous Post Next Post