ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা সকল শ্রেণির জন্যডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা
ডিজিটাল বাংলাদেশ
ভূমিকা: বিজ্ঞান
ও প্রযুক্তির জয়যাত্রা বিশ্বব্যাপী। মনবজাতির জীবনযাত্রাকে ব্যাবপক বদলে দিয়েছে প্রযুক্তি।
বিজ্ঞানের এক একটি আবিষ্কার আমাদেরকে সভ্যতার পথে এক এক ভাপজ এগিয়ে নিয়ে যায়। কম্পিউটার
জ্ঞান ও কম্পিউটারজাত উপায়-উপকর েণর ব্যবহারের নতুন নান্দনিক এক প্রত্যয় হচ্ছে ‘ডিজিটাল
বাংলাদেশ’। মূলত কম্পিউটার আবিষ্কারের ফলে তথ্য প্রযুক্তির নজিরবিহীন উন্নতি ও অগ্রগতিকে
ব্যক্তি ও রাষ্টীয় জীবনের সর্বত্র প্রয়োগ করে বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে উন্নতি ও সমৃদ্বির এক নতুন মডেল রূপে প্রতিস্ভাপনের রূপকল্পের
নাম ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’।
ডিজিটাল বাংলাদেশ
ঘোষণা: 200৬ সালের ২১ মে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া কর্তৃক কক্সবাজারে
ল্যান্ডিং স্টেশন উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ যুক্ত হয় ইসফরমেশন সুপার হাইওয়ে ভা
তথ্য প্রযুক্তির মহাসড়কে। এ মধ্য দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে
ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা আসে 200৮ সালে । নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ১২ ডিসেম্বর
২০০৮ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণ করে যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার
৫০ বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হবে ।একটি সমৃদ্ধ ডিজিটাল
সমাজ, একটি যুগের জরগোষ্ঠী, রূপান্তরিত উৎপাদন ব্যবস্থা, নতুন ও জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি;
সব মিলিয়ে একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজগঠণ- এ স্বপ্নটাই দেখিয়েছেন শেখ হাসিনা। বির্বাচনে জয়ী হবার পর আওয়ামী
লীগ সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপদানের চেষ্টা করেছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ
–এর স্বরুপ ও বৈশিষ্ট: কম্পিউটারের কর্মপ্রবাহের এককসমূহ ডিজিটাল বা দশমিকভিত্তিক।
মূলত এটি তথ্যভিত্তিক একটি কর্শপ্রক্রিয়া।
তথ্যযুগ বা ডিজিটাল যুগ যে নামেই আমরাপ ডাকি
না কেন, কৃষি ও শিল্প যুগের পর মানব সভ্যতার জন্য আসা এ যুগের সার্বিক অংশীদার হিসেবে
বাংলাদেশ বিশ্বের একটি উন্নত দেশ হিসেবে ডিজিটাল প্রুযুক্তি ব্যবহার করে জনগণের জীবনযাত্রার মান
সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য। এটি বাংলাদেশের জনগনের
উন্নত জীবনের প্রত্যাশা, স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা। এটি বাংলাদেশের মানুষের ন্যূনম মৌলিক
প্রয়োজন মেটানোর প্রকৃষ্ট পন্থা। এটি বাংলাদেশের জন্য স্বল্পোন্নত বা দরিদ্র দেশ থেকে
সমৃদ্ধ ও ধনী দেশে রুপান্তরের জন্য মাথাপিছু আয় বা জাতীয় আয বাড়ানোর অঙ্গীকার এবং বাংলাদেশে
জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সোপান।
ডিজিটাল বাংলাদেশ
প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য: ডিজিটাল বাংলাদেশ একটি
রাজনৈতিক স্লোগান হলেও এ র মাধ্যমে সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য বাস্তবায়ন সম্ভব। লক্ষ্যগুলোকে
খুব সংক্ষেপে এভাবে বর্ণনা করা যেতে পারে।
ক. মৌলিক
চাহিদা পূরন: ডিজিটাল বাংলাদেশ রাষ্টকে জনগনের
ন্যূনতম মৌলিক চাহিদা পূরন, অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষা ও চিকৎসার ন্যূনতম দায়িত্ব
গ্রহন করতে হবে। জনগন যাতে তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করার মতো উপার্জন করতে সক্ষম
হয় সে জন্য তাদেরকে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার শেখাতে হবে এবং সেই সঙ্গে রাষ্টকেই
প্রযুক্তি জনগনের জন্য সহজলভ্য করতে হবে।
খ. জনগনের
রাষ্ট প্রতিষ্ঠা: বাংলাদেশকে জনগনের জন্য একটি কল্যাণকর রাষ্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাই
হবে ডিজিটাল বাংলাদেশের ল ক্ষ্য। এই রাষ্টটি হবে প্রকৃতপক্ষেই জনগনের। এ রাষ্টে ডিজিটাল
টুলস ব্যবহার করে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লকে্ষ্য জনগনের উন্নত জীবনযাপনের স্বপ্ন
বাস্তবায়নের পাশাপাশি মৌলিক-মানবিক অধিকা সংরক্ষণসহ সকল সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার নিশ্চয়তা
থাকবে।
গ. রাজনীতির
ডিজিটাল ধারা: ডিজিটাল বাংলাশের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে সরকার ও জাতীয় সংসদসহ সকল রাজনৈতিক
দল ও অন্যান রাজনৈতিক কর্মকান্ড ও ব্যবস্থা ডিজিটাল পদ্ধতিতে পরিচালিত করা এবং রাজনীতির
প্রচার –প্রপাগান্ডা,ভোট গ্রহণ ও বক্তৃতা বিবৃতিতে ডিজিটাল ধারা প্রতিষ্ঠা করা।
ডিজিটাল বাংলাদেশের
কর্মসূচি: কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্য ব্যস্থাকে ডিজিটালে রুপান্তর করে বিদ্যমান আর্থিক
কাঠামোকে জ্ঞানভিত্তিক মেধাকেন্দ্রিক সৃজনশীল
অর্থনীতি গড়ে তোলা ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রধান লক্ষ্য। এ লক্ষ্য বাস্তবাযনের যেসব কর্মসূচি
গ্রহণ কর দরকার তা হলো, ডিজিটাল সরকার প্রতিষ্ঠা করে সরকারের কাজ করার পদ্ধতি ডিজিটাল
করা এবং জনগনের দোর গোড়ায় সরকারের সেবা পৌছানো। এর মাঝে ডিজিটাল ভূমিব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা, ডিজিটাল
স্বাস্থব্যবস্তা, ডিজিটাল নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষাব্যবস্থাসহ সরকারের সকল কাজকে এর আওতাভুক্ত
করার পরিকল্পনা রয়েছ। শিক্ষার বিষয়বস্তু এবং
শিক্ষাদান পদ্ধতিকে ডিজিটালে রুপান্তরিত করা ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার একটি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত
বিষয়।
ডিজিটাল বাংলাদেশ
এর প্রত্যাশা ও বাস্তবতা: একটি দেশকে ডিজিটাল রুপান্তরের অর্থ হলো – দেশটির শাসনব্যবস্থা,
শিক্ষা, বাণিজ্য, কৃষি, ইত্যাদি পরিচালনায় কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটের ব্যবহার নিশ্চিত
করা। সে লক্ষ্যে মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, কমি্পউটার, ই- লার্নিং, ই-গভর্নেন্স ইত্যাদির
সমন্বিত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য ছড়িয়ে দিতে হবে কম্পেউটারের সঙ্গে অনলাইন
বা ইন্টারনেট। নেটওয়ার্ক সুবিধার জন্য প্রয়োজন
চট্রগ্রামে এসে থেমে থাকা ফাইবার অপটিকস ক্যাবলকে দেশের সর্বত্র অর্থাৎ জেলা, উপজেলা
ও গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে দেয়া। আর এটা সম্ভব ই-গভর্নন্সের মাধ্যমে। ২০২১ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ
প্রতিষ্ঠাকহলে সেখানে অর্থ ও শারীরিক শক্তির
বদলে মেধা ও জ্ঞানের শক্তির প্রাধান্য থাকবে। র্কষিভিত্তিক একটি সমাজ থেকে বাংলাদেশ
একটি সৃজনশীল ও ধোভিত্তিক শিল্পোন্নত দেশে পরিণত হয়ে মানবসভ্যতার ডিজিটাল যুগে সেতৃত্ব
দেবে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ
বিষয়ক সতকর্তা: দু:খজনক হলেও সত্য যে, সারা
দুনিয়াতেই ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রসারের ফলে ডিজিটাল ডিভাইড তৈরি ও সম্প্রসারিত হচ্ছে।
বাংলাদেশে ডিজিটাল বাংলাদেশে কর্মসূচি বাস্তবায়িত হলে েএর প্রভাব হিসেবে বিদ্যমান ডিজিটাল
ডিভাইড আরো সম্প্রসারিত হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ সুবিধাভোগী, শোষকগোষ্ঠী, ধনী,
বা বিষেশ সম্প্রদায়-শ্রেণি-গোষ্ঠীর জন্য আরো বেশি সহায়ক হতে পারে। এমনকি জ্ঞান ভিত্তিক
সমাজে জ্ঞানহীন বা জ্ঞানী হবার সুযোগহীন মানুষের জীবনযাপন আরো কষ্টকর হতে পারে। সেজন্যই
ডিজিটাল ডিভাইড না রাখাটা ডিজিটাল বাংলাদেশেথর একটি লক্ষ্য হতে হবে।
উপসংহার:
একথা সর্বজনস্বীকৃত যে, তথ্যপ্রযুক্তিই বর্তমানে বিশ্বের সকল প্রকার উন্নয়ন কর্মকান্ডের
মূল হাতিয়ার। বর্তমানে যে জাতি তথ্যপ্রযুক্তিতে যত বেশি দক্ষ, তাদের সার্বিক অবস্থাও
তত বেশি উন্নত। বর্তমান সরকার ঘোষিত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ হচ্ছে কম্পিউটারাইজড তথ্য
প্রযুক্তিতে দক্ষ ও উন্নত হওয়ার মাধ্যমে বিশ্ব সভ্যতাকে নিজেদের গৌরবময় আসন প্রষ্ঠিার
এক সুদূরপ্রসারী মহৎ পরিকল্পনা। বিজ্ঞান ভালোমন্দ ব্যবহারের তারতম্যের মধ্য দিয়েই
প্রতিষ্ঠা করেছে শান্তি, উন্নতি ও সমৃ্দ্ধি। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ কেবল স্লোগানে সীমাবদ্ধ
না রেকে এর রূপকল্প বা এর প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্ঠা বাংলাদেশের জন্য হোক এক আশীর্বাদ। এ
আশীর্বাদকে ফলপ্রসূ ও স্থায়ী করতে প্রয়োজন কম্পিউটার বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ জনশক্তি।
তাই এ ব্যাপারে আমাদের সবাইকে আরো তৎপর হতে হবে।
Post a Comment
Pllease wait a moment