সমাস কাকে বলে? সমাস কত প্রকার ও কি কি? সমাস নির্ণয়ের সহজ কৌশল

সমাস কাকে বলে? সমাস কত প্রকার ও কি কি? সমাস নির্ণয়ের সহজ কৌশল
সমাস কাকে বলে? সমাস কত প্রকার ও কি কি? সমাস নির্ণয়ের সহজ কৌশল

সমাস ও প্রত্যয়

প্রশ্নঃ সমাস কাকে বলে?

সমাসঃ সমাস অর্থ- সংক্ষেপ, মিলন, একাধিক পদের একপদী করণ। পরস্পর অর্থসঙ্গতি ও সম্বন্ধ বিশিষ্ট দুই বা ততোধিক পদের এক পদে পরিণত হওয়াকে সমাস বলে। যেমনঃ সিংহ চিহ্নত আসন= সিংহাসন।

সমস্তপদঃ সমাসবদ্ধ বা সমাস নিস্পন্ন পদিটির নাম সমস্ত পদ। যেমনঃ সিংহাসন।

সমস্যমান পদঃ যে যে পদে সমাস হয় তাদের প্রত্যেকটিকে সমস্যামান পদ বলে। যেমনঃ সিংহ, আসন।

পূর্বপদঃ সমাসযুক্ত পদের পরবর্তী অংশকে বলা হয় পরপদ। যেমনঃ সিংহ হচ্ছে পূর্বপদ।

উত্তরপদ বা পরপদঃ সমাসযুক্ত পদের প্রথম অংশকে বলা হয় পরপদ। যেমনঃ ‘আসন’ হচ্ছে পরপদ।

বাসবাক্য, বিগ্রহবাক্য বা সমাস বাক্যঃ সমস্তপদ বা সমাসবদ্ধ পদকে ভেঙে  যে বাক্যাংশ করা হয়, তাকে বাসবাক্য, বিগ্রহবাক্য বা সমাসবাক্য বলে। যেমনঃ ‘সিংহ চিহ্নত আসন’।

প্রশ্নঃ  সমাস কত প্রকার ও কি কি?

পকারভেদঃ সমাস প্রধানত ৬ প্রকার । যথাঃ-

১। দ্বন্ধ সমাস

২। কর্মধারয় সমাস

৩। তৎপুরুষ সমাস

৪। বহুব্রীহি সমাস

৫। অব্যয়ীভাব সমাস ও

৬। দ্বিগু সমাস

ব্যাসবাক্য মনে রাখার কৌশল

দ্বন্ধ সমাস

ও, এবং, আর থাকলে

কর্মধারয় সমাস

যেই-সেই, যা-এ, যিনি-তিনি, যে-সে থাকলে।

তৎপুরুষ সমাস

বিভক্তি লোপ পেলে

 বহুব্রীহি

যার, যাতে থাকলে

দ্বিগু সমাস

সমাহার থাকলে

অব্যয়ীভাব সমাস

নৈকট্য/সমীপে, কিংবা, অভাব, পর্যন্ত, সাদৃশ্য, ক্ষুদ্রতা, যোগ্যতা, অতিক্রম, পশ্চাৎ, অতিক্রান্ত থাকলে

 

১. দ্বন্ধ সমাসঃ যে সমাসে দুই বা বহুপদ মিরে এক  এবং প্রত্যেক পদের অর্থ প্রাধান্য পায়, তাকে দ্বন্ধ সমাস বলে।

সমস্তপদ

বাসবাক্য

সমাসের নাম

দম্পত্তি

জায়া ও পতি

 

 

 

দ্বন্ধ

ভাইবোন

ভাই ও বোন

মা-বাবা

মা ও বাবা

দা-কুমড়া

দা ও কুমড়া

অহিনকুল

অহি ও নকুল

জমা-খরচ

জমা ও খরচ

হাট-বাজার

হাট ও বাজার

দুধে-ভাতে

দুধে ও ভাতে

অলুক দ্বন্ধ

ঘরে বাইরে

ঘরে ও বাহিরে

আমরা

আমি, তুমি ও সে

 

 

অলুক দ্বন্ধঃ যে দ্বন্ধ সমাসে কোনো সমাস্যমান পদের বিভক্তি লোপ হয় না, তাকে অলুক দ্বন্ধ বলে।

বহুপদী দ্বন্ধ সমাসঃ তিন বা বহুপদে সমাস হলে তাকে বহুপদী দ্বন্ধ সমাস বলে।

২. কর্মধারয় সমাসঃ যে সমাস বিশেষ্য+ বিশেষণ, বিশেষণ+ বিশেষ্য, বিশেষ্য+ বিশেষ্য ও বিশেষন + বিশেষণ পদের সমন্বয়ে হয় এবং সমস্তপদে পরপদের অর্থই প্রধানরুপে প্রতীয়মান হয় তাকে কর্শধারয় সমাস বলে।

সমস্তপদ

বাসবাক্য

সমাসের নাম

নীলাকাশ

নীল যে আকাশ

 

কর্মধারয় সমাস

নীলপদ্ধ

নীল যে পদ্ম

মহানবী

মহান যে নবী

 

কর্মধারয় সমাস ৪ প্রকারঃ

(ক) মধ্যপদলোপী সমাসঃ যে সমাসে ব্যাসবাক্যের মধ্যপদের লোপ হয়, তাকে মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস বলে। যেমনঃ চালকুমড়া।

সমস্তপদ

বাসবাক্য

সমাসের নাম

সিংহাসন

সিংহ চিহ্নিত আসন

 

 

মধ্যপদলোপী সমাস

জোৎস্নারাত

জোৎস্না সুভিত রাত

মৌমাছি

মৌ-সঞ্চয়কারী মাছি

ভিক্ষান্ন

ভিক্ষা লব্ধ অন্ন

পলান্ন

পল মিশ্রিত অন্ন

হাসিমুখ

হাসি মাখা মুখ

 

(খ) উপমমান কর্মধারয়ঃ উপমান অর্থ তুলনীয় বস্তু। প্রত্যক্ষ কোনো বস্তুর সাথে পরোক্ষ কোনো বস্তুর তুলনা করলে প্রত্যক্ষ বস্তুটিকে বলা হয় উপমেয়, আর যার সাথে তুলনা করা হয়েচে তাকে বলা হয় উপমান। উপমান কর্মধারয় সমাসে উপমান ও উপমেয়ের একটি সাধারণ ধর্ম বা গুণ উল্লেখ থাকবে।

চেনার উপায়ঃ উকটি অনুভব যোগ্য, অপরটি স্পর্শযোগ্য অর্থাৎ একটি বস্তু আছে অপরটি নেই এরুপ বোঝালে উপমান।

সমস্তপদ

বাসবাক্য

সমাসের নাম

ভ্রমর ‍কৃষ্ণ কেশ

ভ্রমরের ন্যায় কৃষ্ণ কেশ (উপমান) (সাধারণ ধর্ম) (উপমেয়)

 

 

উপমান কর্মধারয়

তুষারশুভ্র

তুষারের ন্যায় শুভ্র

কাজল কালো

কাজলের ন্যায় কালো

 

(গ) উপমিত কর্মধারয় সমাসঃ সাধারণ গুণ বা ধর্মবাচক পদেরর উল্লেখ থাকে না এবং ‘উপমেয়’ পদটি পূর্বে বসে।

চেনার উপায়ঃ ‍দুটোই স্পর্শযোগ্য বস্তু হয়।

সমস্তপদ

বাসবাক্য

সমাসের নাম

মুখচন্দ্র

মুখ (উপমেয়) চন্দ্রের (উপমান) ন্যায়

 

উপমিত কর্মধারয়

পুরুষ ‍সিংহ

পুরুষ সিংহের ন্যায়

 

(ঘ) রুপক কর্মধারয় সমাসঃ যে কর্মধারয় সমাসে উপমান ও উপমেয়ের মধ্যে অভিন্নতা কল্পনা করা হয়  তাকে রুপক কর্মধারয় সমাস বলে।

চেনার উপায়ঃ প্রত্যক্ষ করা যায় না এমন পদ রুপক অর্থ পূর্বে বসে।

সমস্তপদ

বাসবাক্য

সমাসের নাম

মনমাঝি

মন রূপ মাঝি

 

রুপক কর্মধারয় সমাস

বিষাদসিন্ধু

বিষাদ রূপ সিন্ধু

ক্রোধানল

ক্রোধ রূপ অনল

ভবনদী

ভব রূপ নদী

 

৩. তৎপুরুষ সমাসঃ যে সমাসে পূর্বপদের সব বিভক্তি লোপ পায় এবং পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায় তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে।

তৎপুরুষ সমাস ৯ প্রকার যথাঃ-

সমস্তপদ

বাসবাক্য

সমাসের নাম

বিপদাপন্ন

বিপদকে আপন্ন

দ্বিতীয়া তৎপুরুষ

চিরসুখী( ব্যাপ্তি অর্থে)

চিরকাল ব্যাপিয়া সুখী

মনগড়া

মন দিয়ে গড়া

তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস

 

 তেলেভাজা

তেল দিয়ে ভাজা

বিয়ে পাগলা

বিয়ের জন্য পাগলা

চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস

 

হাজ্জ্বযাত্রা

হজ্জ্বের জন্য যাত্রা

বিলাতফেরত

বিলাত থেকে ফেরত

পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস

রাজপুত্র

রাজার পুত্র

ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস

গাছপাকা

গাছে পাকা

সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস

অনাদর

ন আদর

নঞ তৎপুরুষ সমাস

পকেটমার

পকেট মারে যে

উপপদ তৎপুরুষ সমাস

ঘিয়ে ভাজা

ঘিয়ে ভাজা

অলুক তৎপুরুষ সমাস

মুখে ভাত

মুখে ভাত

 

৪. বহুব্রীহি সমাসঃ যে সমাসে সমস্যমান পদগুলোর কোনোটির অর্থ না বুঝিয়ে অন্য কোনো পদকে বা অর্থকে ‍বুঝায় তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে।

বহুব্রীহি সমাস ৮ প্রকার। যথাঃ-

সমস্তপদ

বাসবাক্য

সমাসের নাম

খোশমেজাজ

খোশ মেজাজ যার

সমানাধিকরণ বহুব্রীহি

নীরকন্ঠ

নীল কন্ঠ যার

আশীবিষ

আশীতে বিষ যার

ব্যধিকরণ

কানাকানি

কানে কানে যে কথা

ব্যতিহার বহুব্রীহি

হাতাহাতি

হাতে হাতে যে যুদ্ধ

লাঠালাঠি

লাঠিতে লাঠিতে যে যুদ্ধ

অসুখ

নাই সুখ যার

নঞ বহুব্রীহি

অজ্ঞান

নাই জ্ঞান যার

বেতার

নাই তার যার

হাতে খড়ি

হাতে খড়ি দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে

মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি

গায়ে হলুদ

গায়ে হলুদ দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে

একচোখা

একদিকে চোখ যার

প্রদ্যয়ান্ত বহুব্রীহি

মাথায় পাগড়ি

মাথায় পাগড়ি যার

অলুক বহুব্রীহি

দশগজি

দশ গজ পরিমাণ যার

সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি

জীনন্মৃত

জীবিত থেকেও যে মৃত

নিপাতনে সিদ্ধ বহুব্রীহি

 

৫. অব্যয়ীভাব সমাসঃ যে সমাসে পূর্বপদে অব্যয় থাকবে এবং অব্যয়ের অর্থ প্রাধান্য পায় তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে।

চেনার উপায়ঃ সাদৃশ্য,বৈপরীত্য, অভাব, অনতিক্রম্য, ব্যাপ্তী, পশ্চাৎ, পর্যন্ত, অতিক্রান্ত, ঈষৎ, বীপ্সা ইত্যাদি অর্থে অব্যয়ীভাব সমাস হয়।

সমস্তপদ

বাসবাক্য

সমাসের নাম

উপসাগর

সাগরের সদৃশ

 

 

 

 

অব্যয়ীভাব সমাস

হাভাতে

ভাতের অভাব

উপকন্ঠ

কন্ঠের সমীপে

প্রতিদিন

দিন দিন

আপাদমস্তক

পা হতে মাথ পর্যন্ত

আমরণ

মরণ পর্যন্ত

উপকূল

কূলের সমীপে

যথারীতি

রীতিকে অতিক্রম না করে

বেহায়া

হায়ার অভাব

 

৬. দ্বিগু সমাসঃ সমাহার ( সমষ্টি) বা মিলন অর্থে সংখ্যাবাচক  শব্দের সঙ্গে বিশেষ্য পদের যে  সমাস হয়, তাকে দ্বিগু সমাস বলে।

সমস্তপদ

বাসবাক্য

সমাসের নাম

শতাব্দী

শত অব্দের সমাহার

 

দ্বিগু সমাস

তেমাথা

তিন মাথার সমাহার

সেতার

তিন তারের সমাহার

চোরাস্তা

চার রাস্তার সমাহার

 

প্রাদ সমাসঃ- প্র, প্রতি, অনু প্রভৃতি অব্যয়ের সঙ্গে যদি প্রত্যয় সাধিত বিশেষ্যের সমাস হয়, তাকে প্রাদি সমাস বলে। যেমনঃ প্র (প্রকৃষ্ট) যে বচন =প্রবচন।

নিত্য সমাসঃ যে সমাসে সমস্যমান পদগুলো নিত্য সমাসবদ্ধ থাকে, ব্যাসবাক্যের দরকার হয় না, তাকে নিত্য সমাস বলে। যেমনঃ গ্রমান্তর= অন্য গ্রাম, গৃহান্তর= অন্য গৃহ, দেশান্তর= অন্য দেশ

অলুক সমাসঃ যে সমাসে পূর্বপদের বিভক্তি লোপ পায় না তাকে অলুক সমাস বলে। যেমনঃ মায়ে ও ঝিয়ে= মায়ে ঝিয়ে। 

Post a Comment

Pllease wait a moment

Previous Post Next Post