বিদ্যাপতি
বিদ্যাপতি
বিদ্যাপতি


মিতিলার কবি বিদ্যাপতি বাঙালী না হয়েও অথবা বাংলায় কবিতা রচনা না করেও ‘বাঙালী বৈষ্ণবের গুরুস্থানীয়, রসিক বাঙালীর শ্রদ্ধেয় কবি, বৈষ্ণব সহজিয়া সাধকদের নবরসিকের অন্যতম।’ ‘মৈথিল কোকিল’ ও ‘অভিনব জয়দেব’ নামে খ্যাত এই বিস্ময়কর প্রতিভাশীল কবি একাধারে কবি, শিক্ষক, কাহিনীকার. ঐতিহাসিক, ভুবৃত্তান্ত লেখক ও স্মার্ত নিবন্ধকার হিসেবে ধর্মকর্মের ব্যবস্থাদাতা ও আইনের প্রমান্য গ্রন্থের লেখক ছিলেন। তার অন্যান্য উপাধি ছিল- নব কবিশেখর, কবিরঞ্জন, কবিকন্ঠহার, পণ্ডিতঠাকুর, সদুপাধ্যায়, রাজপণ্ডিত ইত্যাদি।
বিদ্যাপতি নিজের জীবন সম্পর্কে তাঁর কজ কিছু বলেন নি। বিভিন্ন গবেষকের তথ্য থেকে জানা যায় বিদ্যাপতি দ্বারভাঙ্গা জেলার অন্তর্গত বিসফী নামক গ্রামে ব্রাহ্মণ বংশে জন্মগ্রহন করেন। বিদ্যাপতির জীবনকথা মিথিলার রাজবংশের ভাগ্যের সঙ্গে জড়িত ছিল। বিদ্যাপতি ভারতচন্দ্রের মতই নাগরিক জীবনের কবি। বিদ্যাপতির কবিতা কবিতা রসজ্ঞ রাজন্যবর্গ ও রাজসেবক কর্মচারীগণের রসতৃষ্ণা মিটানোর জন্য রচিত হয়েছিল। অপরদিকে স্মার্ত পণ্ডিত হিসেবে মিথিলার শিথিলীকৃত ব্রাহ্মণ সমাজকে নতুন করে নিয়মপাশে বদ্ধ করার প্রয়োজনে স্মৃতি সহিংসতার বিধিনিষেধকে পুনরজ্জীবিত করতে চেয়েছিলেন। কবি, রসিক, পণ্ডিত ও ভাষার যাদুকর বিদ্যাপতি সংস্কৃত অবহটঠ ও মৈথিল বুলিতে তাঁর জ্ঞান, চিন্তা, রাসবোধ ও কাব্যকুশলতার সার্থক পরিচয় দান করেছেন।
ড. বিমানবিহারী মজুমদারের মতে, বিদ্যাপতি সম্ভবত ১৩৮০ থেকে ১৪৬০ সাল পর্যন্ত জীবিত ছিলেন। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, ১৩৯০ থেকে ১৪৯০ সালের মধ্যেই বিদ্যাপতির জীবন আবর্তিত হয়েছে। ড. আহমদ শরীফ ‍বিস্তারিত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে ধারনা ব্যক্ত করেছেনযে, বিদ্যাপতি ১৩৬০-৬৫ সালে জন্মগ্রহন করেন এবং ১৪৫৫ সালের মধ্যে পরলোক গমন করেন। সংস্কৃতে তার পান্ডিত্য ছিল, অপভ্রংশে তিনি‘ কীর্তিলতা’ নামে ঐতিহাসিক কাব্য লিখেছিলেন, বিভিন্ন বিষয়ে সৃষ্টিবৈচিত্র্য তাঁকে বিশিষ্ট করেছে; কি্তিু নিজ মাতৃভাষা মৈথিলিতে রাধাকৃষ্ণ প্রেমলীলা বিষয়ক যে অত্যুৎকৃষ্ট পদাবলি রচনা করেছেন তা-ই তাকে অমরতা দান করেছে। তাঁর পদাবলি বাংলা আসাম উড়িষ্যা ও পূর্ববিহারে সমাদৃত । দীর্ঘ ষাট বছরেরও বিশি সময় ধরে বিদ্রাপতি কবিতা লিখেছেন, দশ-বার জন শসাকের  উত্থানপতন তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন। তিনি পদাবলী রচনা করলেও কৃষ্ণভক্ত বৈষ্ণব ছিলেন না, ছিলেন শৈব। কারও মতে পঞ্চোপাসক। শ্রীচৈতন্যদেবের পূর্বে তাঁর আর্ভিবাব হয়েছিলবলে বৈষ্ণবের বৈশিষ্ট্য তাঁর মধ্যে প্রত্যক্ষ করা চলে না। তবে কবি হৃদয়ের নিবিড় আকূতি বেষ্ণব পদাবলীতেই তিনি প্রতিফলিত করেছেন। বিদ্যপতি তাঁর কবি জীবনে বিভিন্ন শাসকের সান্নিধ্যে এসেছিলেন। রাজা শিবসিংহের আমলে রচিত কবিতায় যে পরিমানে ‘বিলাস-কলাকূতুহল, নর্মলীলার উল্লাস এবং আনন্দোজ্জ্বল জীবনের প্রাচুর্য’ দেখা যায় তা পরবর্তী কালের রচনায় অনুপস্থিত।
 বিদ্যাপতির রচিত গ্রন্থ ও গ্রন্থ রচনার আদেশদাতাগণের তালিক:
গ্রন্থ
আদেষ্টা
১.

কীর্তিসিংহ [১২০২-০৪]
২.
কীর্তিপতাকা
রূপায়ন
৩.
পুরুষপরীক্ষা
শিবসিংহ [১৪১০-১৫ খ্রিঃ]
৪.
গোরক্ষবিজয় [নাটক]

৫.
ভূপরিক্রমা
গরুড়নারায়ন শিবসিংহ [১৪১৬-১৭খ্রিঃ]
৬.
শৈবসর্বস্বসার
পদ্মসিংহ ও তৎপত্নী বিশ্বাসদেবী [১৪১৮-২৫খ্রিঃ]
৭.
গঙ্গাবাক্যবলী

৮.
লিখনাবলী
দ্রোণবারের রাজা পুরাদিত্য [১৪১৮খ্রিঃ]
৯.
বিভাগসার
দর্পনারায়ন নরসিংহ [১৪৩০-৫৫খ্রিঃ]
১০.
দানবাক্যাবলী
নরসিংহ পত্নী ধীরসিংহ
১১.
দুর্গাভক্তিতরঙ্গিণী
ভৈরবসিংহ [রূপনারায়ন ও হরিনারায়ণ]
১২.
ব্যাড়ীভক্তিতরঙ্গিণী
দর্পরায়ণ নরসিংহ
১৩.
বর্ষকৃত্য বা ক্রিয়া
অপ্রাপ্ত
১৪.
গয়াবাক্যবলি বা গয়াপত্তন
অপ্রাপ্ত
বাংলাদেশে বিদ্যাপতি প্রধানত পদকর্তারুপে পরিচিত । কিন্তু তাঁর প্রতিভা দিগবিস্তারী ও বহু ব্যাপক ছিল চবলে তাঁর অন্যান্য গ্রন্থও তাঁকে অমর করে রাখার জন্য যথেষ্ট।

Post a Comment

Pllease wait a moment

Previous Post Next Post